চিকিৎসা পেশায় আধ্যাত্মিকতা ও উৎকর্ষ: বুনিয়াদি আলাপ || বাপ্পা আজিজুল || মানসলোক

 


চিকিৎসা পেশায় আধ্যাত্মিকতা ও উৎকর্ষ: বুনিয়াদি আলাপ

বাপ্পা আজিজুল


সৃষ্টির পর থেকে মানুষের নিরন্তর জিজ্ঞাসা আমি কে? আমি কেন পৃথিবীতে এসেছি? আমার দায়িত্ব কী? আমার অধিকার কী? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানুষ আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে যুক্তির, দর্শনের, ইতিহাসের, ধর্মের, বিজ্ঞানের, নিজস্ব অভিজ্ঞতার, স্বপ্নের আরও কত কী? মানুষ দেহ (body), মন ((mind), আত্মার (soul) এক অপূর্ব সমন্বয়। ধর্মসমূহ স্বাভাবিকভাবে এই সম্মতি দিলেও দর্শন মানুষকে সাপেক্ষ সত্তা (contingent being) হিসেবে দেখে দেহ-মনই যার সারসত্তা, যদিও হেগেল ছিলেন ব্যতিক্রম; তিনি আত্মার গুরুত্ব স্বীকার করলেও তা বহুল প্রচার পায়নি। কোন কোন দর্শন মানুষের কর্ম ও ভালো-মন্দ বোধ, দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রাধান্য দিয়েছে। মহাকবি মিল্টনের দেয়া শিক্ষার সংজ্ঞা 'Education is the harmonious development of body, mind & soul' থেকে মানুষের পূর্ণাঙ্গ সত্তার উল্লেখ পাওয়া যায়। অধুনা বিজ্ঞানও সেই পথে হেঁটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দেয়া স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, 'Health is a state of complete physical, mental, social, emotional and spiritual well-being, not merely the absence of disease or infirmity'। ইসলাম দেহ, মন ও আত্মার সমন্বয়ে একক মানুষের ধারণা দেয়। তাই রাসুল সা. বলেছেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে (মুসনাদে আহমাদ, ৫/৩৪০)। মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে (বুখারি, ৬০১১; মুসলিম, ২৫৮৬)। আধুনিকতাবাদীরা শরীর ও মনকে স্বীকার করলেও আত্মাকে মেনে নেয় না। আবার বিজ্ঞানবাদীদের একাংশ শুধু শরীর সর্বস্ব। তারা মনকেও অস্বীকার করে। অথচ মহাকবি মিল্টনের শিক্ষার সংজ্ঞা থেকেও আমরা শরীর, মন ও আত্মার ঐকতান ও উন্নয়নের ধারণা পাই। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় আত্মিক বা আধ্যাত্মিক সুস্থতার উল্লেখ করেছে।

চিকিৎসা পেশা একটি মানবিক সেবা, যেখানে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া হয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব শুধু রোগ নিরাময়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একজন রোগীর সম্পূর্ণ জীবনধারাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা। আধ্যাত্মিকতা একটি ব্যক্তিগত বিষয়, যা মানুষের জীবন, বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আত্মার শান্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি রোগীর শারীরিক ও মানসিক আরোগ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুস্থ মন শরীরের সুস্থতায় অবদান রাখে, এবং আধ্যাত্মিক চর্চা একজন রোগীকে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করে।চিকিৎসা পেশায় আধ্যাত্মিকতা একটি সর্বব্যাপী, সামগ্রিক ব্যাপার। এতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে-

১. রোগ নির্ণয়, কারণ নির্ধারণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আত্মা ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়

২. শরিয়াহর উদ্দেশ্য প্রতিপালন

৩. চিকিৎসা পেশা ও সেবায় ইসলামি নৈতিকতার অনুসরণ

৪. কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতার (workplace spirituality) বাস্তবায়ন 

৫. চিকিৎসা শিক্ষা ও পেশার ইসলামিকরণ

ওহি নির্দেশিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের একটি নিজস্ব বিশ্ববীক্ষা আছে। যেহেতু মানবজাতিকে দুনিয়া আবাদ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, মানুষ দুনিয়া আবাদ করবে ইবাদতের দ্বারা, অন্যের কল্যাণের মাধ্যমে, মহান রবের প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। মানুষের একাজ মসৃণভাবে পালনের লক্ষ্যে আরও পাঠানো  হয়েছে নবি-রাসুল ও পথনির্দেশিকা। মানুষসহ জমিনের ওপর বিচরণরত প্রতিটি প্রাণীর জন্য রয়েছে রিজিকের ব্যবস্থা। মানুষের সুবিধার্থে অনুগত করা হয়েছে পরিবেশ, প্রাণীকুল ও নানাবিধ উপকরণ। দায়িত্ব হল দ্বীন পরিপালন ও প্রতিষ্ঠা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইবাদত ও মুয়ামেলাতের মাধ্যমে দ্বীন সহজ ও শুদ্ধভাবে পরিপালনের জন্য প্রণীত নীতিমালাকে শরিয়াহ বলে। ইসলামি শরিয়াহ আইন হিসেবে নির্ভুল, প্রত্যাদিষ্ট, সর্বজনীন, সম্পূর্ণ, বাস্তবসম্মত ও সমকালীন এবং দুনিয়া-পরকাল উভয় জগতের জন্য কল্যাণমুখী। উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে শরিয়াহ মোটাদাগে ৫ টি মাকাসিদ বা উদ্দেশ্য হাসিল করে- দ্বীনের সুরক্ষা, জীবনের সুরক্ষা, আকলের সুরক্ষা, বংশধারার সুরক্ষা, সম্পদ ও সম্ভ্রমের সুরক্ষা। শরিয়াহ'র চূড়ান্ত লক্ষ্য উভয় জগতে মানবজাতির প্রভূত কল্যাণ সাধন করা। দুনিয়ার কল্যাণার্থে শরিয়াহ মুয়ামেলাত (আখলাক), আখিরাতের কল্যাণের জন্য আকিদা ও ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষের চাহিদার মধ্যে কিছু রয়েছে জরুরিয়াত (Primary needs), কিছু হাজিয়াত (Secondary needs), কিছু তাহসিনিয়াত বা কামালিয়াত (Tertiary needs)। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা জরুরিয়াতের অন্তর্ভুক্ত।

চিকিৎসা পেশায় আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা মূলত-

১. রোগীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: আধ্যাত্মিকতা রোগীর মধ্যে আশা ও ইতিবাচকতার জন্ম দেয়। এটি রোগীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে, যা রোগ নিরাময়ের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

২. রোগীর জীবনদর্শনের পরিবর্তন: আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে রোগী তার জীবনের গভীরতর অর্থ ও উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে পারে।

৩. চিকিৎসকের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি: আধ্যাত্মিকতা চিকিৎসককে রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবিক হতে সাহায্য করে। এতে চিকিৎসা পদ্ধতিতে আন্তরিকতা ও সততার সংযোজন ঘটে।

উৎকর্ষ অর্জনের উপায়

১. নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা: চিকিৎসা পেশায় নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। সততা, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ উৎকর্ষের মূল ভিত্তি।

২. রোগীর আস্থা অর্জন: রোগীর সঙ্গে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলা চিকিৎসকের একটি প্রধান কাজ। রোগীর আস্থা অর্জনের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম আরও সফল হয়।

৩. আধুনিক চিকিৎসা ও আধ্যাত্মিকতার সংমিশ্রণ: প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক চর্চা চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যোগ করে। এতে রোগীর শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি সাধিত হয়।


আল্লাহ নিজে সুন্দর, তিনি সুন্দর পছন্দ করেন। একটি কাজ যত উপায়ে করা যায়, তন্মধ্যে সর্বোত্তম উপায়ে সম্পাদন করা ঈমানের অনিবার্য দাবি। চিকিৎসা পেশায় আধ্যাত্মিকতা ও উৎকর্ষের সমন্বয় একটি অনন্য মডেল তৈরি করে, যেখানে চিকিৎসা কেবল শারীরিক আরোগ্যের নয়, বরং মানসিক শান্তি ও আত্মিক উন্নতির পথও তৈরি করে। চিকিৎসকদের মানবিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তাই, আধ্যাত্মিকতা এবং উৎকর্ষ অর্জনের এই পথে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

তিব্বে নববিকে এক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে সামনে রাখা যায়। তিব্বে নববি (طب نبوي) হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক প্রদত্ত চিকিৎসা নির্দেশনা, পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপদেশের একটি সামগ্রিক ধারণা। এটি মূলত ইসলামের স্বাস্থ্যবিধি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার দিকে দৃষ্টি দেয়।

তিব্বে নববি কেবল শারীরিক রোগ নিরাময়ের জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক রোগ যেমন গুনাহ বা কুসংস্কার থেকেও মুক্তি লাভে সহায়ক। এর মধ্যে কুরআনের আয়াত, দোয়া, খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য জীবনাচরণের নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত।


তিব্বে নববির বৈশিষ্ট্য-

১. আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা: তিব্বে নববির মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং নির্ভরতা। এটি চিকিৎসার পাশাপাশি আল্লাহর রহমতের উপর আস্থা রাখার শিক্ষা দেয়। ২. প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার: তিব্বে নববিতে প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য উপাদান যেমন মধু, কালোজিরা, জল ইত্যাদি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ৩. প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যবিধি: এতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যাভ্যাস এবং রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। ৪. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা: এটি শরীরের পাশাপাশি মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার ওপর গুরুত্ব দেয়।


তিব্বে নববির উদাহরণ

১. কালোজিরা:

নবি করিম সা. বলেছেন, "কালোজিরা মৃত্যুর ছাড়া সকল রোগের জন্য উপকারী।" (সহিহ বুখারি, ৫৬৭৮) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: কালোজিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

২. মধু:

আল-কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: "তোমার প্রভু মৌমাছিকে নির্দেশ দিয়েছেন... তাদের পেটে যে পানীয় তৈরি হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের আরোগ্য।" (সূরা আন-নাহল, ১৬:৬৯) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: মধু অ্যান্টিসেপটিক এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি ক্ষত নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।

৩. হিজামা (শিঙ্গা লাগানো):

নবি করিম সা. বলেছেন: "শিঙ্গা লাগানো (হিজামা) চিকিৎসার অন্যতম উত্তম পদ্ধতি।" (সহিহ বুখারি, ৫৬৯৯) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং শারীরিক আরাম প্রদান করে।

৪. খেজুর:

নবি সা. বলেছেন: "যে ব্যক্তি সকাল বেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সে সেদিন বিষ বা জাদুর ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে।" (সহিহ বুখারি, ৫৪৪৫) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: খেজুরে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শক্তি বৃদ্ধি এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর।

৫. অশুদ্ধতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

নবি সা. বলেছেন: "পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।" (সহিহ মুসলিম, ২২৩) পরিচ্ছন্নতার চর্চা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তিব্বে নববির গুরুত্ব

১. স্বাস্থ্য রক্ষায় নির্দেশনা: তিব্বে নববি শরীরের রোগ নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। ২. ধর্মীয় নির্দেশনা: এটি ইসলামের নৈতিকতা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ৩. প্রাকৃতিক চিকিৎসা: এতে রাসায়নিক মুক্ত, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের গুরুত্ব রয়েছে। ৪. পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা: তিব্বে নববি কেবল শারীরিক সুস্থতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতিতেও সহায়ক।


তিব্বে নববি ইসলামের এক অনন্য চিকিৎসা দর্শন, যা আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক ও নৈতিক ভিত্তিতে রোগ নিরাময়ের পথ দেখায়। তিব্বে নববি বাহুল্য ব্যয় বর্জিত, প্রতিরোধমূলক, non invasive or minimally invasive. এটি মুসলিম সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং আধ্যাত্মিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি অপরিহার্য দিক।


তিব্বে নববি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিম চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের রেনেসাঁ সূচিত হয়। ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞান একটি গৌরবময় অধ্যায়। মুসলিম চিকিৎসকগণ প্রাচীন জ্ঞানকে লালন করে তা উন্নত করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তারা শুধু রোগ নিরাময়ে অগ্রগামী ছিলেন না, বরং রোগ প্রতিরোধ, সার্জারি, ফার্মাকোলজি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞান মূলত গ্রিক, পারস্য এবং ভারতীয় জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে উন্নত হয়। নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনাদর্শ এবং কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা মুসলিম চিকিৎসকদের জন্য একটি নৈতিক ভিত্তি প্রদান করে।

প্রসিদ্ধ মুসলিম চিকিৎসকগণ ও তাদের অবদান

১. আল-রাযি (৮৬৫-৯২৫ খ্রি.):

পশ্চিমে তিনি "Rhazes" নামে পরিচিত।

তার বিখ্যাত গ্রন্থ "কিতাব আল-হাওয়ি" ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন।

গুটিবসন্ত ও হামের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

২. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি.):

তাকে "মেডিসিনের রাজপুত্র" বলা হয়।

তার বিখ্যাত গ্রন্থ "আল-কানুন ফি আল-তিব্ব" (The Canon of Medicine) মধ্যযুগে ইউরোপের চিকিৎসা শিক্ষার মূল পাঠ্যপুস্তক ছিল।

তিনি শারীরবৃত্ত, শল্যচিকিৎসা এবং মনোবিদ্যার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন।

৩. ইবনে জুহর (১০৯১-১১৬১ খ্রি.):

তিনি "Avenzoar" নামে পরিচিত।

ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা এবং শল্যচিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

তিনি আধুনিক অপারেশনের ভিত্তি স্থাপন করেন।

৪. ইবনে নাফিস (১২১৩-১২৮৮ খ্রি.):

তিনি পালমোনারি সার্কুলেশন (ফুসফুসীয় রক্তপ্রবাহ) সম্পর্কে প্রথম সঠিক ধারণা দেন।

তার গবেষণাগুলো আধুনিক কার্ডিওলজির ভিত্তি স্থাপন করে।

৫. আল-জাহরাভি (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.):

তিনি "সার্জারির পিতা" নামে পরিচিত।

তার বিখ্যাত গ্রন্থ "আল-তাসরিফ" ছিল শল্যচিকিৎসার একটি পরিপূর্ণ নির্দেশিকা।

তিনি বিভিন্ন শল্যচিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ভাবন করেন।


মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের বিশেষ অবদান-

১. হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা:

মুসলিমরা প্রথমবারের মতো সংগঠিত হাসপাতাল চালু করেন।

"বাইতুল হিকমা" এবং "বিমারিস্তান" ছিল সেসব সময়ের চিকিৎসা ও গবেষণার কেন্দ্র।

২. চিকিৎসা শিক্ষা:

মুসলিম চিকিৎসকেরা ছাত্রদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

শিক্ষার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং ছিল বাধ্যতামূলক।

৩. ফার্মাকোলজি:

মুসলিমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি করেন।

"আল-কিন্দি" ফার্মাকোলজির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

৪. শল্যচিকিৎসা:

মুসলিম চিকিৎসকেরা অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কাটাছেঁড়া এবং ক্ষত নিরাময়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম উদ্ভাবন করেন।

৫. মনোরোগবিদ্যা: 

ইবনে সিনা, আল কিন্দি মিউজিক থেরাপির প্রবর্তন করেন। ইমাম গাজালি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়িম প্রমুখ রূহ, কলবের রোগ ও চিকিৎসা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেন। 


ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের নৈতিকতা

১. ইসলাম চিকিৎসাবিজ্ঞানের নৈতিক দিকগুলোর ওপর জোর দিয়েছে। যেমন: রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

২. চিকিৎসা প্রদানকে ইবাদতের অংশ হিসেবে গণ্য করা।

৩. হারাম ওষুধ এড়িয়ে চলা এবং হালাল উপায় অনুসন্ধান করা।

৪. জীবন রক্ষা করা এবং রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করা।

মুসলিম চিকিৎসকগণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তারা তাদের সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতিকে উন্নত করার পাশাপাশি একটি নৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেন, যা আজও চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রাসঙ্গিক। তাদের উদ্ভাবন ও গবেষণা আধুনিক চিকিৎসার ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আরও অগ্রসর হতে অনুপ্রাণিত করেছে।

কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোতে দীর্ঘ উপনিবেশ ও আধুনিকতাবাদের জুলুমের কারণে এই ইসলামি চিকিৎসা জ্ঞান ও ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। বিপরীতে সেক্যুলার চিকিৎসাব্যবস্থার আজ জয়জয়কার। যেহেতু উপনিবেশ সবক্ষেত্রেই বিইসলামিকরণ করেছে, তাই উত্তর ঔপনিবেশিক এবং উত্তর আধুনিক চিন্তা ও সময়ের দাবি হলে সবকিছুকে পুনরায় ইসলামিকরণ করা। 


বাংলাদেশে চিকিৎসাব্যবস্থার ইসলামিকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে চিকিৎসা সেবায় ইসলামের নৈতিক ও সামাজিক দিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি চিকিৎসা পেশাকে মানবিকতা, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে, চিকিৎসাব্যবস্থার ইসলামিকরণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এই প্রবন্ধে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য করণীয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

চ্যালেঞ্জসমূহ-

১. ধর্মনিরপেক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা: বাংলাদেশে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ, যা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক। এটি ইসলামিক নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করতে অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

২. ধর্মীয় জ্ঞান ও চিকিৎসার সমন্বয়ের অভাব: চিকিৎসকদের অনেকেই ইসলামিক নীতিমালা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন না। ফলে, ধর্মীয় নির্দেশিকা ও চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধতা: ইসলামে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বা উপাদান ব্যবহার নিষিদ্ধ, যেমন হারাম উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ। এর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।

৪. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব: চিকিৎসাব্যবস্থা ইসলামিকরণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি।

৫. সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাধা: ইসলামিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্তি অনেক সময় সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে, যা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।

করণীয়-

১. ইসলামিক নীতিমালার সংযোজন: চিকিৎসাব্যবস্থায় ইসলামের মৌলিক নীতিগুলো যেমন ন্যায়পরায়ণতা, মানবিকতা এবং রোগীর প্রতি দায়িত্বশীলতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২. ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়: চিকিৎসকদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।

৩. হালাল ওষুধের প্রচলন: হারাম উপাদানমুক্ত ওষুধ তৈরি এবং ব্যবহারের জন্য গবেষণা এবং উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

৪. ইসলামিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা: ইসলামি নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যেখানে রোগীর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্ব এবং এর সুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

৬. সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা: সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসলামিক চিকিৎসাব্যবস্থা বাস্তবায়নে নীতি সহায়তা এবং অর্থায়ন করতে হবে।

৭. আলেমদের সহযোগিতা: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইসলামিক নীতিমালা বাস্তবায়নে আলেমদের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। তারা চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারেন।

 ৮.জ্ঞান উৎপাদন করতে হবে: নিচে ২টি পদ্ধতি প্রস্তাব করা  হল-

ক. একাডেমিক গবেষকদের নিয়ে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ করা।

- সারাদেশ থেকে রিসার্চ মেথডোলজি জানা এমফিল/পিএইচডি/এমপিএইচ/এমডি/এমএস... ডিগ্রিধারী লোকদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করতে হবে। ডেলিগট কমপক্ষে ১০০ জন। 

- তাদেরকে ইসলামাইজেশন ও ইসলাম ইন্টিগ্রেটেড গবেষণার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। 

- ওয়ার্কশপে তাদের একটাই কাজ হবে রিসার্চ title ঠিক করে জমা দিয়ে যাবে। সময় ১ বছর। তাদেরকে ফলোআপ করা হবে, প্রয়োজনে বাজেট দেয়া হবে। ন্যাশনাল/ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশ করতে হবে।

- ওয়ার্কশপে রিসার্চ উইং নামে একটি ফোরাম ও তার সেটাপ দিয়ে দিতে হবে। 


খ. বিদেশ থেকে বিভিন্ন সেক্টরের আন্তর্জাতিক স্কলারদের বাংলাদেশে হায়ার করা। 

- ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল, CIMC, সিলেট উইমেনস মেডিকেল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২০ জন আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলারকে অন্তত ৫ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া। 

- মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুর্কিয়ে, মিশর, USA, কানাডা, KSA, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটিতে এধরণের স্কলার আছেন। 

- তাদেরকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসে দায়িত্ব দেন, পুরো প্রতিষ্ঠান তারা ইসলামাইজ করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন ও সেক্টরকে ইসলামাইজ করার রূপরেখা দেবেন। 

- তাদের সাথে আমাদের ২০ জন গবেষককে ট্যাগ করে দেন, স্কলারদের দায়িত্ব থাকবে এই ২০ জনকে তাদের মতো করে তৈরি করতে। 

- তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল প্রকাশ করে আমাদের একাডেমিয়াকে ইসলাম ও রিসার্চ অভিমুখী করতে হবে। বাংলাদেশে চিকিৎসাব্যবস্থার ইসলামিকরণ একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ, যা স্বাস্থ্যসেবাকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে আরও উন্নত করতে পারে। তবে এটি বাস্তবায়নে ধৈর্য, সমন্বয়, এবং সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। চিকিৎসক, আলেম, এবং সমাজের অন্যান্য অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।


কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা

কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা হলো কাজের পরিবেশে এমন একটি মানসিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা আচরণ, যা মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং জীবনের গভীরতর অর্থের সন্ধানকে প্রতিফলিত করে। এটি কেবল ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক চর্চার বিষয় নয়, বরং কর্মীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, সহমর্মিতা এবং নৈতিকতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও প্রতিফলিত হয়। আল্লাহ আমাদের মালিক বা কর্মবিধায়ক, আমরা তাঁর মামলুক বা দাস। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সাথে আমাদের একটি ওয়ার্কিং রিলেশন আছে। আমাদের কর্মক্ষেত্র দুনিয়া, কাজের মজুরি দুনিয়া, আখিরাত উভয় জগতেই পাবো। আমাদের জব ডেস্ক্রিপশন হল দ্বীন ইসলাম। আল্লাহ আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেননি। কাজ আদায়ের জন্য ন্যুনতম জুলুমও করেন না। মজুরি ১০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখেন। আবার কর্মঘন্টাও কিন্তু ২৪/৭ নয়। আবু যার গিফারি রা  বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়- আল্লাহর কাজে আমাদের দৈনিক কর্মঘন্টা মাত্র ৮। এই বিষয়ে গভীর চিন্তা করলে আমরা কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতার একটা নমুনা পেয়ে যাই। 

কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতার মূল উপাদান-

১. মানবিক সম্পর্ক: সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন। 

২. নৈতিকতা: সততা, ন্যায্যতা এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা। 

৩. উচ্চতর উদ্দেশ্য: কাজকে জীবনের গভীরতর অর্থের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং শুধু ব্যক্তিগত লাভের পরিবর্তে বৃহত্তর কল্যাণে মনোনিবেশ করা। 

৪. আত্ম-উন্নয়ন: কর্মক্ষেত্রকে আত্মার পরিশুদ্ধি ও মানসিক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে দেখা। 

৫. আন্তরিকতা ও সদ্ভাব: কাজের পরিবেশে শান্তি ও ইতিবাচকতার প্রসার।

কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব

১. কর্মীদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: আধ্যাত্মিকতা কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে, যা চাপ মোকাবিলা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

২. কর্মপরিবেশ উন্নত করা: আধ্যাত্মিকতা একটি সহানুভূতিশীল এবং নৈতিক পরিবেশ তৈরি করে, যা কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করে। 

৩. প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন: আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি কর্মীদের মধ্যে উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের অনুপ্রেরণা দেয় এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

৪. মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা: এটি কর্মীদের হতাশা, উদ্বেগ এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। 

৫. সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি: আধ্যাত্মিক চেতনা কর্মীদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করে।


কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধির উপায়-

১. নৈতিক নেতৃত্ব: নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের চর্চা করা। 

২. মানসিক সুস্থতার উদ্যোগ: মেডিটেশন, প্রশান্তির সুযোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম আয়োজন করা। 

৩. সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি: কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সমঝোতার পরিবেশ গড়ে তোলা। ৪. উচ্চতর মূল্যবোধের চর্চা: কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা, সততা এবং ন্যায্যতার মতো মূল্যবোধকে উৎসাহিত করা। ৫. আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ: কর্মীদের আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা কার্যক্রম আয়োজন করা।

কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা মানে কেবল ধর্মীয় চর্চা নয়, বরং এটি মানুষের ভেতরকার ভালো দিকগুলোকে উদ্ভাসিত করার একটি মাধ্যম। এটি কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, যা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। একবিংশ শতাব্দীতে একটি টেকসই ও সুখী কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমরা আশা করব, উত্তর ফ্যাসিবাদ কালে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ধীরে ধীরে ইসলামিকরণ শুরু হবে। কর্মক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হবে। আমাদের চিকিৎসা একাডেমিয়া জ্ঞান উৎপাদন, চর্চা ও গবেষণা অভিমুখী হবে। 

একজন মুসলিম চিকিৎসক রোগীকে সাক্ষাতের সময় সালাম দেবেন। পর্যাপ্ত সময় দেবেন (বিশ্বব্যাপী আদর্শ সাক্ষাত সময় ১৭-২৪ মিনিট)। রোগীকে সমানুভূতি নিয়ে দেখবেন। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্ট দেবেন। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী স্বল্প খরচে সর্বোচ্চ সেবার মানসিকতা রাখবেন। রোগীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন এবং দোয়া চাইবেন। রোগী দেখার সময়টুকু ইবাদাতে নিমগ্ন আছেন সেই অনুভূতি লালন করবেন। রোগীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। রোগীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দেবেন। অবহেলা করবেন না। 

No comments

Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.