গণ-অভ্যুত্থান '২৪: একটি উত্তর আধুনিক ফেনোমেনন || বাপ্পা আজিজুল || মানসলোক ||
বাপ্পা আজিজুল
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানকে দর্শনের দিক থেকে আমি উত্তর আধুনিক ফেনোমেনন মনে করি। কেন? সেই ব্যাখ্যাতে যাওয়ার আগে উত্তর আধুনিকতা কী তা নিয়ে কিঞ্চিত আলাপ করা যাক-
'উত্তর আধুনিকতা' হচ্ছে একটা সর্বময় আন্দোলন যার শুরু হয়েছে আধুনিকতার প্রতিক্রিয়ায়। 'আধুনিকতা' একটি বিশেষ 'চিন্তা-কাঠামো'র সংশ্লেষ। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষে ভক্তির বিপরীতে যুক্তিসর্বস্ব যে মনোসাংস্কৃতিক উন্মাদনা মানুষকে করেছে শেকড়চ্ছিন্ন, ঐতিহ্য বিমুখ ও ইহজাগতিক তাকে বলা হয় আধুনিকতা। সভ্যতার বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের যাপনকে অনেক আয়েশসাধ্য করলেও শিল্প-সাহিত্য-নন্দনে আধুনিকতাবাদ মহাকালের এক মহা বিষফোঁড়া। তথাকথিত আধুনিকতার এই ধারণাটি ইউরোপ জাত। ইউরোপের 'আলোকায়ন যুগ' ও অব্যবহিত পরেই গড়ে ওঠা শিল্প বিপ্লব, দুনিয়াসুদ্ধ জেঁকে বসা উপনিবেশ আধুনিকতার ভিতকে দাঁড় করিয়ে দেয়। ইউরোপে জন্ম নেয়া নয়া সমাজ, নয়া রাষ্ট্র, নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে সাংস্কৃতিক আবহ সেটিই আধুনিকতা। 'আধুনিক' শব্দটির ব্যবহার সুপ্রাচীন হলেও আধুনিকতার এই বৈষয়িক ও বৈশ্বিক যাত্রা সপ্তদশ শতাব্দীতেই। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে ইউরোপে সংঘটিত হয় প্রথম প্রযুক্তি বিপ্লব, যার ফল ছিল বাস্তববাদের উত্থান। মোটর বা পেট্রোল ইঞ্জিন জন্ম দেয় দ্বিতীয় প্রযুক্তি বিপ্লবের যার ফসল আধুনিকতাবাদ। মধ্যযুগের সামন্ত প্রভু ও চার্চের বর্বর নির্যাতন থেকে আপাত মুক্তির এই দর্শন লুফে নেয় ইউরোপের খেটে খাওয়া মানুষ। প্রজা কিংবা ভূমিদাসের জন্মদাগ মুছে তারা পায় সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক তকমা। সামষ্টিক জীবন থেকে তারা প্রবেশ করে সীমাহীন ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদে। কিন্তু আধুনিকতা তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে পুঁজিবাদ ও আরও পরে জন্ম নেয়া সমাজতন্ত্রের নব্য ফাঁদে। 'আলোকায়ন' প্রকল্পের মূলকথা ছিলো জীবনকে যুক্তির ছকে আটকে ফেলা। যদিও শেষমেশ যুক্তি, যুক্তির প্রয়োগ, বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সত্যের উপর অবিচল বিশ্বাস তাদের মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়। ধর্মের পরিবর্তে প্রথমে 'হিউম্যানিজম' বা 'মানবতাবাদ' মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে যা শেষমেশ 'সেক্যুলারিজম' এ রূপ নেয়। আধুনিকতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ 'ধর্মনিরপেক্ষতা' জন্ম দেয় ধর্মহীনতা। আধুনিকতা যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ ছাড়া সবকিছুকেই খারিজ করে দেয়। ধর্মীয় পরিচয়কে প্রতিস্থাপন করেছে 'জাতি পরিচয়' এর বাতাবরণে। ব্যক্তি আধ্যাত্মিকতার পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে 'দেশপ্রেম'। এদিকে মানুষ ততদিন ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বদৌলতে একদম একা, তার মনোজগতে বাসা বেঁধেছে হতাশা ও বাহারি নেশা। অশ্লীলতা ও অবাধ যৌনতার ফ্যান্টাসি। বিংশ শতাব্দীর প্রথম সিকিভাগে চলল 'হাই-মডার্নিজম' এর কাল। শিল্প-সাহিত্যে এলো নতুন নন্দনের ধারণা। কিন্তু ধর্মহীন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা, শঠতা, শাসকদের ফ্যাসিবাদ বাঁধিয়ে দেয় বড় বড় বিশ্ববিগ্রহ। এবার টনক নড়ল। অবক্ষয়ী আধুনিকতা, ক্ষুরধার যুক্তি, আকাশছোঁয়া বৈজ্ঞানিক সাফল্য, ঠুনকো জাতীয়তাবাদ, অনির্বাণ দেশপ্রেম, সীমাহীন প্রগতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ল। সন্দেহে নিপতিত হলো গালগপ্পো ও বুলি (মেটান্যারেটিভ)। পরিত্রাণের উপায় খোঁজা শুরু হলো। সকল ক্ষমতার কেন্দ্র ভেঙে পড়ল। প্রান্তরা জেগে উঠলো। ধসে গেল যাবতীয় অধিবয়ান। যুক্তি ও চিন্তার জগতে তৈরি হলো নৈরাজ্য, প্রতিচিন্তা। এরই নাম 'উত্তর আধুনিকতা'। কম্পিউটার, স্যাটেলাইট, ন্যানোটেকনোলজি এনে দিয়েছে তৃতীয় প্রযুক্তি বিপ্লব, যার পরিণাম উত্তর আধুনিকতা। আধুনিকতার ন্যায় এর উদ্ভবও ইউরোপ মুলুকে। সেখান থেকে হৃষ্টপুষ্ট হয় মার্কিন মুলুকে গিয়ে। উত্তর আধুনিকতা কাল নির্দেশক নয়, প্রবণতা নির্ণায়ক। ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন আন্দোলন ও তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে উত্তর আধুনিকতার যাত্রা শুরু। উত্তর আধুনিকতা একটি মাত্র তত্ত্ব বা সত্য নয় বরং একগুচ্ছ সত্য ও তত্ত্বের সমষ্টি। এর একক সাধু-সন্ত-পুরুত উপাস্য ব্যক্তি কেউ নয়, আছে একদল নিষ্ঠাবান সাধক। আছে আধুনিকতার ধর্মহীনতার বিপরীতে ধর্মে ফেরার চিরায়ত ব্যাকুলতা।
আধুনিকতার প্রধান ভিত্তি ছিল হেগেল, ডারউইন, মার্কস, এঙ্গেলস, বোদলেয়ার, ফ্রয়েডের মতবাদ। যার উপর দাঁড়িয়ে আধুনিক মানুষ হয়ে উঠেছিল চরম যুক্তিবাদী, পরম অহমবাদী, পুঁজিবাদী, ভোগবাদী, সমাজবাদী, ফ্যাসিবাদী, নাৎসিবাদী, শুন্যবাদী, নাস্তিক্যবাদী, অবাধ যৌনাচারী ও নৈরাজ্যবাদী। হয়েছিল বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত, মাদকাসক্ত। নিরংকুশ আধুনিকতা ও শ্রেষ্ঠত্ব মানবসভ্যতা চরম সংকট ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর বোধদয় হয় বিশ্ববিবেকের। এন্টিহেগেল, এন্টি মার্কস, এন্টি ফ্রয়েডিয়ান গোষ্ঠীর দাপটে বিপন্ন বোধ করতে থাকে আধুনিকতাবাদ। মানুষ তথাকথিত যুক্তি ও তত্ত্বের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়। আধুনিকতার অচলায়তন ভেঙে জন্ম নিতে থাকে উত্তর আধুনিকতা। এ এক উত্তরণ। উত্তর আধুনিকতা কারও একক প্রচেষ্টা নয়। লেসলি ফিল্ডার ও ইহাব হাসানই প্রথম তাৎপর্যপূর্ণভাবে পোস্টমর্ডানিজম শব্দটি ব্যবহার করে। এরপর সত্তরের মধ্যভাগে আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়। তারও পরে ফ্রাঁসোয়া লিওতর ফ্রান্সে এবং হেবারমাস জার্মানিতে পোস্টমর্ডানিজমকে প্রাসংগিক করে তোলেন। পোস্টমর্ডানিজমের দার্শনিক ভিত্তি গড়ে ওঠে দেরিদা, ফুকো ও সাঈদের হাত ধরে। পোস্টমর্ডানিজম শিল্প-সাহিত্যে রূপায়িত হতে থাকে বিশেষ করে কবিতায়। পোস্টমর্ডান কবি হন দায়মুক্ত, শৃঙ্খলমুক্ত, যুক্তি ও কাঠামো বহির্ভূত।
নব্বইয়ের শুরুতেই বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে উত্তর আধুনিকতার প্রভাব পড়তে থাকে। সেসময় তিনটি ধারা মূলত কার্যকর ছিল।
১. কেউ কেউ ইউরোকেন্দ্রিক পোস্টমর্ডানিজমকে প্রমোট করা শুরু করেছিলেন। তাদের মতে, অনুকরণ করলে পশ্চিমের করব, পশ্চিমবাংলার নয়। তাছাড়া যেহেতু এর উৎপত্তি পশ্চিমে, তাই পশ্চিমের অনুকরণই শ্রেয়।
২. ঢাকায় উত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলেন কবি ইশারফ হোসেন। তাঁর সম্পাদিত সকাল পত্রিকা এতে মুখপত্রের ভূমিকা পালন করে। তিনি সাংগঠনিক তৎপরতা চালান। আড্ডা, সভা-সেমিনার ও লেখালেখির মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রান্তকে উত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনে যুক্ত করেন। তিনি কবিতায় দেশ, কাল, ঐতিহ্যের কথা বলেন। তার মতে, বিশ্বাসী নান্দনিকতাও উত্তর আধুনিক কবিতার অন্যতম উপাদান ও লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
৩. ঢাকার বাইরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এজাজ ইউসুফীর নেতৃত্বে 'লিরিক' গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় যারা পশ্চিমবঙ্গের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে উত্তর আধুনিক সাহিত্যের এদেশীয় ভিত শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
নব্বইয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য পরিসরে উত্তর আধুনিকতার চর্চা হলেও তা মূলধারা হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গত দুই দশকের সাংস্কৃতিক তৎপরতার দিকে তাকালে দেখা যাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে আধুনিকতাবাদী সেক্যুলারদের নয়া উত্থান হয়েছে। রাজনীতিতে শেখ মুজিব আর সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ হয়েছেন পূজনীয় অবতার, এই দুজনকে কেন্দ্র করে তৈরি ও শক্তিশালী হয়েছে ফ্যাসিবাদের মেটান্যারেটিভ।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই গণ-অভ্যুত্থান উত্তর আধুনিক বলার পেছনে যথেষ্ট লক্ষণ বিরাজমান।
১. উত্তর আধুনিকতার মতো এই অভ্যুত্থানে কোন একক ব্যক্তি নয়, বরং অনেক বিপ্লবীর চিন্তা, মেধা, মনন, শ্রম ও সময়ের সংশ্লেষ রয়েছে। তাই আধুনিকতাবাদের মতো কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি এখানে মহানায়ক বা পূজনীয় নয়।
২. এই অভ্যুত্থান অতীতের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিবিশেষ (জাতির পিতা) কেন্দ্রিক তথাকথিত সকল মেটান্যারেটিভ বা অধিবয়ানকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে।
৩. কেবল কেন্দ্র নয়, এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সকল প্রান্তকে যুক্ত করেছে ও জাগিয়ে তুলেছে। আধুনিকতাবাদী সেক্যুলারদের কাছে যে রংপুর বাহের দেশ বা মঙ্গাপীড়িত, ক্ষ্যাত হিসেবে নিগৃহীত, সেখানেই ১ম শহীদ আবু সাঈদের আত্মদানের মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান হয়েছে।
৪. এই আন্দোলন আধুনিকতাবাদের মতো নির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ, ছক কষা, একমুখী, নান্দনিক ছিল না। এই আন্দোলন ছিল হুটহাট, পরিস্থিতি নির্ভর, বহুমুখী ও সিজোফ্রেনিক টাইপের। ফলে সিদ্ধান্তহীনতা, সংশয়, সময়ক্ষেপণ লক্ষ্য করা গেছে আন্দোলনের সমন্বয়দের মাঝে। উত্তর সত্য (post truth era) যুগের প্রভাবে প্রচুর গুজব যেমন আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে। আবার ৪র্থ শিল্প বিপ্লবোত্তর ন্যানোটেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবাদে গুজবকে সহজেই মিটিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
৫. ভার্চুয়াল জগতে আন্দোলনের বার্তা ও মেজাজ প্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে 'হাইপার রিয়েল' ছবি/আর্ট তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে যা খুবই আকর্ষণীয়, যুগোপযোগী, ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।
৬. ফ্যাসিবাদ আধুনিকতাবাদের অন্যতম হাতিয়ার। তাই এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটাই সবচেয়ে বড় উত্তর আধুনিকতা।
৭. আধুনিকতাবাদ বরাবর সেক্যুলার, ধর্মহীন, ধর্মবিদ্বেষী রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। এবারের অভ্যুত্থানে ব্যতিক্রম হল এর উদ্যোগী ও স্টেকহোল্ডাররা ধর্মের প্রতি সংবেদনশীল, ক্ষতিকর নয় (benign)। এবং এই আন্দোলনে ধর্মভিত্তিক দল, আলেম সমাজ, মাদ্রাসা ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতি ও তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
৮. উত্তর ঔপনিবেশিকতা বাংলাদেশে চলমান দেশ-কাল-ঐতিহ্যভিত্তিক স্থানীয় উত্তর আধুনিকতার একটি প্রকল্প। কলোনি আমাদের ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করেছে। আমাদের করে গেছে কলোনির সাংস্কৃতিক ও মানসিক দাস। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাই আজতক উপনিবেশিক সংবিধান, আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিষ্পেষিত। বিপ্লবীদের চিন্তা ও চেতনায় আমরা রাষ্ট্র মেরামত, বাংলাদেশের কন্টেক্সটে নতুন সংবিধান প্রণয়ন প্রভৃতি উত্তর ঔপনিবেশিক চৈতন্যের স্ফুরণ দেখতে পাচ্ছি। এছাড়া দেয়ালে দেয়ালে আরবি ক্যালিওগ্রাফি ও গ্রামবাংলার নান্দনিক গ্রাফিতি আমাদের সোনালি অতীত ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
৯. আধুনিকতাবাদের হামবড়া ও সাহেবিপনা প্রকল্পের প্রধান মাধ্যম হল প্রমিত ভাষা। আধুনিকতাবাদ ভাষার আঞ্চলিকতাকে হীনমন্য করে দেখায়। অথচ এবারের গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণভোমড়া ছিল আঞ্চলিক, গ্রামীণ, লোকজ শব্দের নানা ধরণের শ্লোগান, যেমন- 'হামার ব্যাটাক মারলু ক্যানে', 'বৌতদিন হাইয়ো, আর ন হাইয়ো' ইত্যাদি। আবার সংগ্রামকালীন কর্মসূচিগুলোতে ইংরেজি অনেক শব্দের ব্যবহারও লক্ষ্যণীয়।
১০. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রবীন্দ্র সংগীত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান বা অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, দেশাত্মবোধক গান এবারের আন্দোলনে পাত্তা পায়নি। বিপ্লবের জজবা বাড়াতে কাজে লেগেছে নজরুল সংগীত, আল মাহমুদ প্রমুখের কবিতা ও র্যাপারদের গান। এটিও নি:সন্দেহে উত্তর আধুনিক উত্তরণ।
১১. উত্তর আধুনিকতা সমন্বয়ের (thesis > antithesis > synthesis) কথা বলে। এইবারের অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকালে তা বেশ চোখে পড়ে। এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে গত দেড় দশক ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মত, পথ, ধর্ম, পেশা, ছাত্র-শ্রমিক, নারী-পুরুষ, দেশি-বিদেশী, প্রবাসী, নৃগোষ্ঠী, অনলাইন-অফলাইন প্রচেষ্টার সমন্বয়ে এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট একটি মতৈক্য তৈরি হয়েছে। আগামী দিনের দেশ গঠন ও পরিচালনায় বিপ্লবীরা সেই সমন্বয় চেতনা আরও জোরদার করবেন আশা করা যায়।
১২. এবারের আন্দোলনের সূচনা, পরিচালনা বা সমাপনে কোন এলিট যুক্ত ছিল না, বরং এটি সকল ধরণের এলিটিসিজমের বিপক্ষে অলিখিত যুদ্ধ ছিল। এতে অংশ নিয়েছে, কথা বলেছে, সোচ্চার হয়েছে সমাজের বঞ্চিত ও নিম্নবর্গীয়রা (subalterns)। বিষয়টি পুরোপুরি উত্তর আধুনিক ফেনোমেনন।
১৩. ক্ষমতার কেন্দ্র, ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, সেলিব্রেটি কিংবা সুশীলদের সন্দেহ করা ও প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে উত্তর আধুনিকতা। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে অবিশ্বাস করাও এই উত্তর আধুনিক প্রবণতার অংশ। সমকালীন সময়ে এই প্রবণতা যে তুঙ্গে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
'জেন-জির (gen-z) কাছে আমাদের প্রত্যাশা ও উত্তর আধুনিক মননের দাবি কী' নিয়ে পরবর্তীতে লেখার ইচ্ছা রইল।
No comments